ভারতের বিমান চলাচল নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কর্মী ঘাটতির এমন সমস্যার মুখোমুখি, যা তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করছে। দেশটির একটি সংসদীয় কমিটি নতুন প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে।সংসদের উচ্চকক্ষে বুধবার উপস্থাপিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তরের (ডিজিসিএ) ‘গভীর ও অবিরাম ঘাটতি’ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অখণ্ডতার জন্য ‘অস্তিত্বগত হুমকি’ তৈরি করেছে।
১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হওয়ার পর বিমান চলাচল নিরাপত্তা পর্যালোচনা করার দায়িত্ব আইন প্রণেতাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছিল।তবে প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার উল্লেখ না থাকলেও এতে অন্য বেশ কিছু উদ্বেগ চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকার বিষয়টিও রয়েছে।ডিজিসিএ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিবিসি মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করেছে।সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, তবে অতীতে এগুলো আইন প্রণয়ন ও কখনো কখনো নিয়মাবলীতে প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমান চলাচল বাজার ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিমানযাত্রায় ব্যাপক বৃদ্ধি দেখেছে, যার পেছনে রয়েছে স্বল্প খরচের এয়ারলাইন, বাড়তে থাকা আয় ও নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের মাধ্যমে সংযোগ বাড়ানোর সরকারি প্রচেষ্টা।কিন্তু এই বৃদ্ধির সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জও এসেছে, যার মধ্যে রয়েছে যোগ্য কর্মীর ঘাটতি, বিদ্যমান কর্মীদের ক্লান্তি ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পর থেকে এয়ারলাইন ও ভারতের বৃহত্তর বিমান পরিবহন খাতের ওপর নজর বাড়ানো হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি নিয়ে ধারাবাহিক উদ্বেগের খবরের পর জুলাই মাসে বিবিসি ডিজিসিএর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি আপনি আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও) প্রকাশিত বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা সূচক দেখেন, যা প্রতি মিলিয়ন ফ্লাইটে দুর্ঘটনার সংখ্যা নিরীক্ষণ করে, ভারত ধারাবাহিকভাবে বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে ভালো করছে।২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মাত্র দুই বছর ভারত বৈশ্বিক গড় অতিক্রম করেছে।’
সরকারি ও বিরোধী দলের আইন প্রণেতাদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় কমিটি ভারতের বিমান চলাচল খাতের বিভিন্ন পদ্ধতিগত দুর্বলতা তালিকাভুক্ত করেছে এবং সংস্কারের সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ডিজিসিএ ‘বর্তমান কাঠামোতে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম নয়’। কারণ গুরুতর কর্মী সংকট রয়েছে। এক হাজার ৬৩টি পদের মধ্যে মাত্র ৫৫৩টি পূর্ণ হয়েছে, প্রায় ৫০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে।তবে এই মাসের শুরুতে মন্ত্রণালয় সংসদে জানিয়েছিল, এ ঘাটতি ডিজিসিএর কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলছে না।এ ছাড়া কমিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ‘ধীর ও অনমনীয়’ বলে অভিহিত করেছে, যা দক্ষ প্রতিভা আকর্ষণে বাধা সৃষ্টি করছে। কমিটি প্রস্তাব করেছে, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ‘সম্পূর্ণ আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন’ দেওয়া উচিত। পাশাপাশি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের মধ্যে ক্লান্তি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরো সতর্ক করা হয়েছে, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের কিছু কর্মী পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নন এবং ‘বর্তমান নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ সক্ষমতার মধ্যে অসামঞ্জস্য, পাশাপাশি কার্যক্রমের অতিরিক্ত চাপ আকাশসীমার নিরাপত্তার জন্য সরাসরি ও চলমান হুমকি সৃষ্টি করছে।’কমিটি আরো জানিয়েছে, ডিজিসিএ ত্রুটি জানানোর জন্য একটি গোপনীয় ব্যবস্থা রাখলেও ‘স্পষ্ট সুরক্ষার প্রয়োজন’ রয়েছে।কমিটি কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়, বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং দেশ ও বিশ্বব্যাপী শিল্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে বলে জানিয়েছে।
Leave a Reply