২০২৪ইং সালের ৫ই আগষ্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশে সরকারের বড়সড় পতনের পরে প্রতিটি থানার আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটে। তার প্রভাবে আশুলিয়া থানাও দফায় দফায় পরিবর্তন হয় বেশ কয়েকজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। সূত্র বলছেন, যে সকল ওসি পরিবর্তন করা হয়েছে প্রত্যেকটির কোন না কোন কারণ রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছেন , আশুলিয়ার কিছু সাংবাদিকদের সাথে এসকল ওসিদের সাথে বনিবনা না হওয়া সংবাদ প্রকাশ ও বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ এনে তাদের ক্লোজড করা হয়েছে। ২০২৪ইং সালের ০৫ই আগষ্টের পরে এখন পর্যন্ত মোট চারজন ওসি ক্লোজড করা হয়েছে। তারা হলেন ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক , নুরে আলম ফকির, মনিরুল ইসলাম ডাবলু ও সোহরাব আল হোসাইন। তারপর ২০২৫ইং সালের ২৫ শে জুন সর্বশেষ আশুলিয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসাবে যোগদান করেন আব্দুল হান্নান। তিনি যোগদানের পরেই আশুলিয়া থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমল পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি সময়ে একটি গণমাধ্যমে ওসি হান্নানের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। নান অভিযোগ তুলা হয়েছে সেখানে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলা হয়েছে।
আশুলিয়ায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, আশুলিয়া থানার আইনশৃঙ্খলা উন্নতির পেছনে ওসি হান্নানের অবদান অনস্বীকার্য। যে কোন ঘটনা নিয়ে কেউ থানায় এলে দ্রুত সময়ে আইনত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ওসির পক্ষ থেকে যথেষ্ট তৎপর দেখা যায়। যা আগে কখনো দেখিনি।এদিকে আবু সাইদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ২০২২ ইং সালে আমার মামার একটা বাড়িতে ভাংচুর ও ২০২৪ইং সালের সরকার পতনের পরে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। বিভিন্ন সময়ে আশুলিয়া থানার সহযোগিতা চেয়েছি সে রকম কোন সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু ওসি হান্নান সাহেব দায়িত্ব নেওয়ার পরে আইনগত ভাবে অনেকটাই আগাতে পেরেছি। আমার মনে হয়েছে আশুলিয়া থানার বর্তমান ওসি ন্যায়ের পক্ষেই কাজ করেন।
আশুলিয়া থানার সেবা নিয়ে একটু যাচাই করতে থানার মূল গেইটের সামনে দাঁড়াতেই একটা অভিযোগের কাগজ হাতে হাজির হন আমেনা আক্তার (৩২) এক পোশাক শ্রমিক। তার অভিযোগ তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে তাকে নির্যাতন করে এবং তার বেতনের বড় অংশ জোরপূর্বক নিয়ে অনলাইন জুয়ায় নষ্ট করে। বিষয়টি ওসির নজরে আসার পরে আমাকে আইনি সেবা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন । তবে অভিযোগ করতে কোন প্রকার দালালদের হয়রানি আছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এই প্রথম এসেছি থানায় আমি কম্পিউটারের দোকান থেকে লিখে থানায় জমা দিয়েছিলাম। কোন টাকা পয়সা লাগেনি।ঢাকার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রই ধরা চলে। সেই হিসাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মজীবি মানুষের যেমন এখানে বিচরণ বেশি তেমনি দেশের বিভিন্ন জেলার তুলনায় ক্রাইমের ঘটনাও বেশি ঘটে। হত্যা,ধর্ষণ,খুন ও ডাকাতির ঘটনা যেন নিত্যদিনের কাজ ছিল। কিন্তু আশুলিয়া থানার বতমান ওসির বিচক্ষণতা আর নজরদারির কারণে আইনশৃঙ্খলাতে নিয়েছে একটি নতুন রূপ। তাতে করে অপরাধও যেমন কমেছে ,অপরাধীরাও রয়েছে আতংকে।
ওসি হান্নান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন নিয়মিতভাবে। চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বিরুদ্ধে অভিযানে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে।ফলে এলাকার জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। পুলিশ জানায়, তার নির্দেশনায় আশুলিয়ার বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিনই নিয়মিত টহল চলছে।ওসি আব্দুল হান্নান নিয়মিতভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করছেন। শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও বাজার এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোয় চুরি, ছিনতাই ও নারী নির্যাতনের ঘটনাও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।ওসি হান্নানের কঠোর প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তা ও কিছু সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই চক্রটি পূর্বে থানার আশপাশে দালালি ও ঘুষ বাণিজ্য করত। এখন তাদের সেই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
বিষয়টি নিয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, পুলিশ যদি জনগণের পাশে থাকে, অপরাধ নিজে থেকেই কমে যাবে। আমি মাননীয় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান স্যারের দিক নির্দেশনায় আশুলিয়াকে আমরা একটি শান্ত, নিরাপদ ও আইনশৃঙ্খলাপূর্ণ মডেল থানা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”বর্তমানে আশুলিয়া থানা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিষ্ঠান নয়— এটি জনগণের আস্থা, নিরাপত্তা ও সেবার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ওসি আব্দুল হান্নানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা এখন প্রতিদিনের সেবায় মানবিকতা ও দায়বদ্ধতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। ইতিমধ্যে একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে যা লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অসত্য বলে ও দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য , ছাত্র-জনতা আন্দোলনের পরে উল্লেখযোগ্য হারে ওসি পরিবর্তনের ঘটনা যেন নজির হয়ে আছে। তার মধ্যে ভাল ভাবে দায়িত্ব পালন করেও যেন মন রক্ষার প্রতিযোগিতা চলে এখানে। পান থেকে চুন খুললেই শুরু হয় বিরোধিতা। আর এসব বিরোধীর একমাত্র চাবিকাঠি এই অঞ্চলের কিছু গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সাংবাদিকতার উপর যেন আস্থা না হারায় সেদিকে বিশেষ নজর রাখারও দাবি জানান সচেতন মহল।
Leave a Reply